দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার সর্বশেষ বাধা দূরীভূত হলো। আগামী জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহে সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) খুলনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ভৈরব সেতুর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মিলন। কার্যাদেশ দেওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর সওজ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা জমা দিলো।
২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কন্সস্ট্রাকশন লিঃ ( করিম গ্রুপ) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। একই বছরের ২৬ নভেম্বর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেজ ক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ড তৈরি করে সেতু তৈরীর ইকুইপমেন্ট স্টক করতে শুরু করে। কিন্ত সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, এলাইমেন্ট (লে আউট), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারে না। পরবর্তীতে নগর উন্নয়ন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিলেও কেডিএ’র ভৈরব সেতুর পশ্চিম সাইড নগরীর কুলিবান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট পর্যন্ত “ডিটেল এ্যাকশন প্লানের” আওতাভুক্ত হওয়ায় ছাড়পত্র দিতে অসন্মতি জানায়।
এই জটিলতা নিরসনের লক্ষে গত ৫ এপ্রিল খুলনা সার্কিট হাউজে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা জেলা প্রশাসক মোহান্মদ হেলাল হোসেন, কেডিএ’র প্রতিনিধি, খুলনা সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মিলন, দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুল আলম এর সমন্বয়ে এক সভায় কেডিএ ভৈরব সেতুর গুরুত্ব উপলব্ধি করে ছাড়পত্র দিতে সন্মতি প্রকাশ করে। এর কিছুদিন পর কেডিএ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা সড়ক ও জনপদ (সওজ) কাছে তাদের (এনওসি) ছাড়পত্র প্রদান করে। তারপরও সেতু তৈরির কাজ ঝুলে থাকে ভূমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে। গত সপ্তাহে খুলনা সওজ আনুষ্ঠানিকভাবে দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া-গাজীরহাট-তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিলোমিটার ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার অন্তর্গত ৪ নং মহেশ্বরপাশা, ১৩ নং দেবনগর ১৪ নং দিঘলিয়া মৌজার ১৭ দশমিক ৪৯ একর ৭ দশমিক ০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা খুলনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দিয়েছে।
খুলনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) মোঃ মারুফুল আলম ভৈরব সেতুর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনার প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেন, সবেমাত্র আমরা প্রস্তাবনা পেয়েছি। এখন জেলা প্রশাসকের স্থান নির্বাচন কমিটির সভা হবে, সরেজমিনে স্থান পরিদর্শন করতে হবে এরপর প্রস্তাবনাটি যাচাই বাছাই শেষে সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটির ছাড়পত্র আসার পর আমরা প্রথমে ভূমির মালিকদের ৪ ধারা নোটিশ তারপর ৬ ধারা নোটিশ জারি করবো। লকডাউনের কারণে আমাদের অফিশিয়াল কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলেও সরেজমিনের কাজগুলোয় কিছুটা বিলম্ব হবে। সব মিলিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি সম্পন্ন করতে আনুমানিক ২ মাস সময় লেগে যেতে পারে।
খুলনা সওজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ২৬ নভেম্বর ‘ওয়াহিদ কন্সট্রসকশন লিঃ’(করিম গ্রুপ) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।
ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় করা হবে। ভৈরব সেতুর মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২৪ মাস অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার মেয়াদ থাকলেও নির্ধারিত সময়ে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে সেক্ষেত্রে সেতু নির্মাণ কাজের ব্যয়ও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী।
তিনি আরো বলেন, সেতু তৈরির সকল প্রস্তুতি আামাদের রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনার ছাড়পত্র না পেলেও ঈদের পূর্বে সেতুর পূর্ব সাইড সরকারি খাস জমি দেয়াড়া ঈদগাহের ভিতর ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
এদিকে আগামীকাল ৫ এপ্রিল সকালে ভৈরব সেতুর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া ফেরিঘাট থেকে উপজেলার মোড় পর্যন্ত স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশল মোঃ আনিসুজ্জামান মিলন।
খুলনা গেজেট/এনএম